Religious – The News বাংলা https://thenewsbangla.com Bengali News Portal Tue, 23 Aug 2022 16:47:35 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7.2 https://thenewsbangla.com/wp-content/uploads/2018/09/cropped-cdacf4af-1517-4a2e-9115-8796fbc7217f-32x32.jpeg Religious – The News বাংলা https://thenewsbangla.com 32 32 বৃহস্পতিবার কি ভাবে লক্ষ্মী পুজো করলে, আপনি হতে পারেন লাখপতি https://thenewsbangla.com/wants-to-become-millionaire-you-worship-goddess-lakshmi-on-thursday/ Thu, 27 Jun 2019 15:38:14 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=14590 বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবার; সাপ্তাহিক লক্ষ্মী আরাধনার দিন। বাংলায় বৃহস্পতিবারকে বলা হয় লক্ষ্মীবার। এইদিন লক্ষ্মীপূজা করলে; হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। কিন্তু আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে; শুদ্ধ আচারে অথচ সহজে লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?

লক্ষ্মীপূজার উপকরণ অতীব সামান্য। যেগুলি লাগে সেগুলি হল; সিঁদুর, ঘট ১টি, ধান সামান্য, মাটি সামান্য, আমপল্লব ১টি, ফুল ১টি, দুর্বা সামান্য, তুলসীপাতা ২টি, ফুল, কাঁঠালি কলা বা হরীতকী ১টি, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সামান্য আতপচাল ও জল।

আরও পড়ুনঃ কেন মা কালীর পায়ের নিচে বাবা মহাদেব

লক্ষ্মীকে আমরা টাকাপয়সার দেবী ভাবি; আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ওইটুকুতেই নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দেন না; তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন। এককথায় লক্ষ্মীপূজা করলে; মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়।

লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর; একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে; নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে; তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল নটার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল। লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না।

মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করুন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোন পূজার আগে; আমাদের প্রাণশক্তির উৎস; সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন। একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন; পূজার ফুল-নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নেবেন।

এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে; তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে; মঙ্গলচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন।

এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি; একে একে লক্ষ্মীকে দেবেন। লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল। এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন। এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন।

এরপর লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন। তারপর ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন।

তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর প্যাঁচাকেও একটি ফুল দেবেন। বাড়িতে যে লক্ষ্মীর পাঁচালি আছে সেটিই পড়বেন। ভক্তি ভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করুন; সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুন আপনি ও আপনার পরিবার।

]]>
কঙ্কালমালিনী কালী, মনোহর ডাকাত আর মনোহরপুকুর রোডের গল্প https://thenewsbangla.com/kali-temple-manohar-dacoit-and-the-story-of-manoharpukur-road-kolkata/ Sun, 17 Mar 2019 18:27:13 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=8655 দক্ষিণ কলকাতায় গড়িয়াহাট যাবার পথে ট্রাংগুলার পার্ক এর ঠিক পাশেই দেখা যায় একটা ছোট্ট কালীমন্দির। চারদিকে বড় বড় বাড়ির মাঝে সে কোণঠাসা হয়ে গেছে, খুব একটা খেয়াল না করলে চোখেই পরে না এই মন্দির। কালিমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক দুর্ধষ ডাকাত, যার নাম ছিল মনোহর বাগদি।

আরও পড়ুনঃ কেন মা কালীর পায়ের নিচে বাবা মহাদেব

পাথরের কালীমূর্তিটি, ছোট হলেও ভীষণদর্শনা। প্রতিষ্ঠার সময় কোনো অলঙ্কার ছিল না দেবীর গায়ে। দেবী ছিলেন আয়ুধভূষিতা, মুন্ডমালা-বিভূষিতা, আর হাতে ছিল নরবলি হওয়া কোনো হতভাগ্যের করোটি। এই কালীর পূজো প্রতিষ্টা করে, ডাকাত মনোহর বাগদি ও তার দলবল। আজকের দিনেও, এই কালীমন্দিরে গেলে, আপনার গা ছম-ছম করবে।

টুকরো টুকরো জনশ্রুতিতে জানা যায় পলাশীর যুদ্ধের শেষের সময়ে। সেই সময় বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শুরু হয় নি। চারিদিকে চলছিল অরাজকতা। আর সেই সময়, কালীঘাটসহ দক্ষিণ কলকাতার এই পুরো এলাকাটা ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা, আর তার মাঝে বয়ে যেত আদিগঙ্গা। লোকজন কালীঘাট দর্শনের জন্য এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, অথবা নৌকাপথে আদিগঙ্গার উপর দিয়ে আসতো। আর এই জঙ্গলের মধ্যেই ছিল মনোহর ডাকাতের আস্তানা।

আরও পড়ুনঃ নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো

এরকম সময়ে, এক গভীর রাতে মনোহর ডাকাত দলবলসহ ডাকাতি করে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফিরছিল তার আস্তানায়। হটাৎ তাদের চোখে পড়ে, একজন মহিলা বাঘের আঘাতে আহত হয়ে খালের কাদায় পড়ে আছে, আর তার পাশে পাঁচ-ছয় বছরের ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তারা তুলে নিয়ে আসে দুজনকে, কিন্তু অনেক সেবা-শুশ্রূষা করার পরেও মহিলার মৃত্যু হয়, আর ছেলেটি বেঁচে ওঠে।

আরও পড়ুনঃ শনি শিগনাপুর গ্রামে দরজাবিহীন বাড়িঘর থাকার কিংবদন্তি কাহিনী

মনোহর ডাকাত মহিলা এবং শিশুদের উপর কোনো অত্যাচার করতো না। তাই ছেলেটিকে নিয়ে সে পড়লো মহা ফ্যাসাদে! কার বাড়ির ছেলে, সেটা খুঁজে বের করতে গেলে মহা বিপদ, আবার এই ছোট ছেলেকে সে রাখেই বা কোথায়! শেষে মনোহর নিজের ছেলের মতো তার দেখভাল করতো, তাকে গল্প শোনাতো, তার জন্য ভালো জামাকাপড় জোগাড় করে নিয়ে আসতো। ছেলেটির আগের স্মৃতি কিছু ছিল না। মনোহর তার নাম দিলো হারাধন।

আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা

সন্তানস্নেহ যে মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে, সেটার আর একটা উদাহরণ হলো মনোহর ডাকাত। যত দিন যায়, হারাধনের উপরে মনোহরের স্নেহ আরো বেড়ে চলে। ডাকাতি করার উৎসাহ ক্রমশঃ কমে যেতে থাকে তার। দলের লোকেরা অনেক অনুরোধ করলে, তবে সে এক এক দিন যেত ডাকাতি করতে।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সিদ্ধপুরুষ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এর অজানা কাহিনী

ধীরে ধীরে হারাধন বড়ো হতে লাগলো, আর মনোহর বৃদ্ধ হতে লাগলো। মনোহরকে একটা চিন্তা সবসময় তাড়া করতো, যে তার পরে হারাধনের কি হবে! এর মধ্যে, ভবানীপুর অঞ্চলে ক্রিশ্চান পাদ্রীরা ছোট ছোট পাঠশালা খুলছিলেন। তারা গরিব-দুঃখী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতেন, খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা দিতেন এবং বাইবেল পড়াতেন। মনোহর তাদের কাছে ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিলো। হারাধনের নাম হলো হারাধন বিশ্বাস, বাবা মনোহর বিশ্বাস। মেধাবী হারাধন, খুব যত্ন করে লেখাপড়া শিখতে লাগলো।

আরও পড়ুনঃ শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ১)

এদিকে দিনে দিনে জরার ভারে মনোহরের শক্তি কমে আসছিল, আগের মতো চলাফেরা করতে পারতোনা সে। অন্যদিকে কোম্পানির শাসন শুরু হয়ে গেছে, তাই চুরি ডাকাতি রাহাজানি কমে আসছিল। মনোহরের দল ভেঙে গেছিলো। এখন হারাধনকে ছেড়ে থাকতে পারতোনা সে এক মুহূর্ত। কিন্তু বিচক্ষণ মনোহর তার পেশার কথা গোপন করেছিল ছেলের কাছে, তাই শেষ জীবনে সে চাষবাস করে আর জমিতে লোক খাটিয়ে, চাষীর মতো জীবন কাটাতো। মনে অনুতাপও জন্মেছিল তার।

আরও পড়ুনঃ শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ২)

মৃত্যুর আগে, পাওয়া গুপ্তধনের নাম করে, ছেলেকে তিন ঘড়া মোহর আর সোনা-রুপো দিয়ে যায় মনোহর। আরো অনুরোধ করে, তার মৃত্যুর পরে এই এলাকায় যেন হারাধন কয়েকটা দিঘি আর পুকুর কাটিয়ে দেয়। কারণ ওই সময়ে এই এলাকায়, গরমের সময় খুব জলকষ্ট ছিল। হারাধন, বাবার মৃত্যুর পরে, সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। মনোহরপুকুর সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বড়ো পুকুর ও দিঘি কাটিয়ে দিয়েছিল সে। আজ সেগুলোর অনেকগুলো বুজে গেছে, আর কয়েকটা অসংস্কৃত অবস্থায় আছে।

আজকে মনোহরও নেই, আর হারাধনও নেই। কিন্তু তাদের স্মৃতি ও কীর্তি অমর করে রেখেছে, সাউথ কলকাতার একটি রাস্তা, যার নাম মনোহরপুকুর রোড। গল্প জানার পর এবার ঘুরে দেখে আসুন সেই রাস্তা আর মন্দিরটি।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

]]>
শনি শিগনাপুর গ্রামে দরজাবিহীন বাড়িঘর থাকার কিংবদন্তি কাহিনী https://thenewsbangla.com/shani-shingnapur-a-village-with-no-doors-the-grace-of-god-shoni/ Wed, 13 Mar 2019 08:37:35 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=8275 ঘর আছে কিন্তু দরজা নেই। মানুষ আছে কিন্তু চোর নেই। সম্পদ আছে অথচ পাহারা নেই। কথাগুলো শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবে মহারাষ্ট্রের শনি শিগনাপুর গ্রামের ছবি ঠিক এমনই। গ্রামের মানুষ তালা ব্যবহার করে না। তালা তো দূরে থাক, দরজাই নেই কোন বাড়ি-ঘরে। এমনকি দোকান-পাট তালা ছাড়া থাকলেও এ গ্রামের অধিবাসীরা নিশ্চিন্তে থাকেন। চোরের কোনো ভয় নেই তাদের মনে। সম্পদ রক্ষায় তাদের একমাত্র ভরসা ভগবান।

আরও পড়ুনঃ কেন মা কালীর পায়ের নিচে বাবা মহাদেব

শনি শিগনাপুর গ্রামের বাড়িঘর তালাহীন থাকার পেছনে একটি কিংবদন্তি চালু রয়েছে। তারা বলে থাকে, প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রবল বৃষ্টির পর বন্যা হয়। বন্যায় পানাশনালা নদী থেকে কালো পাথরের একটি বড় ফলক গ্রামের মধ্যে ভেসে আসে। স্থানীয় এক বাসিন্দা ১.৫ মিটার লম্বা এ পাথরটিকে একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এবং সারা গ্রামবাসী অবাক হয়ে দেখে যে, এ আঘাতে পাথরটি থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

এরপরের রাতে গ্রাম প্রধান স্বপ্নে ভগবান শনিকে দেখতে পান। স্বপ্নে ভগবান শনি জানান এই পাথরটি আসলে তারই মূর্তি। ভগবান শনি গ্রামের প্রধানকে হুকুম দিলেন এই পাথরটি গ্রামে সংরক্ষণ করতে হবে। শনি আরেকটি শর্ত জুড়ে দিলেন যে, এখন থেকে গ্রামের সবকিছু খুলে রাখতে হবে। তিনিই সবকিছু রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিলেন।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সিদ্ধপুরুষ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এর অজানা কাহিনী

গ্রামবাসীক পাথরটিকে গ্রামের মধ্যবর্তী একটি খোলা জায়গায় স্থাপন করেন। এরপর তারা বাড়ির সব দরজা খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মনে করে ভগবান শনি থাকতে তাদের আর এগুলোর দরকার নেই।

৩০০ বছরের পুরনো সে রীতি আজও চলছে। গ্রামের লোকজন কুকুর বা অন্যান্য পশু থেকে রক্ষা পেতে হালকা কাঠের ফ্রেম ব্যবহার করে। এমন অরক্ষিত অবস্থাতেই তারা টাকা-পয়সা, গহনা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী রেখে বাইরে চলে যায়। তাদের বিশ্বাস ভগবানই এসব সম্পদ রক্ষা করবেন। শুনতে অবাক লাগলেও তারা টয়লেটেও দরজা লাগায় না। লজ্জা নিবারণের জন্য পাতলা পর্দা ব্যবহার করে মাত্র।

গ্রামবাসী কোথাও গেলে তাদের জিনিসপত্র দেখে রাখার জন্য পাশের বাড়িতে বলেও যায় না। তারা বিশ্বাস করে কেউ যদি চুরি করে তাইলে সে অন্ধ হয়ে যাবে। আবার কেউ যদি অসততার আশ্রয় নেয় তাইলে সে সাত বছর পরে হলেও বিপদগ্রস্থ হবে। গ্রামবাসী এটাও বিশ্বাস করে যে, কেউ যদি ঘরে কাঠের দরজা লাগায় তাইলে সে কিছুদিনের মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়।

আরও পড়ুনঃ নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো

দিন দিন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামটিতে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যাংক, পুলিশ ফাঁড়ি প্রভৃতি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পুলিশ ফাঁড়ি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কোনোরকম অভিযোগ পায়নি। মজার ব্যাপার হল, গ্রামের রীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশ ফাঁড়িটিতেও কোনো মূল দরজা নেই।

সাধারণত ব্যাংকে কড়া নিরাপত্তা থাকে। কিন্তু সে ধারণাকে বদলে দিয়ে এ গ্রামে ২০১১ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক তাদের একমাত্র তালাবিহীন শাখা চালু করে। গ্রামবাসীর বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা রেখে তারা রিমোট কন্ট্রোল কাঁচের দরজা বসিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা

শনি শিগনাপুর গ্রামের এমন অদ্ভুত গল্প ছড়িয়ে গেছে সারা ভারতময়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০,০০০ দর্শণার্থী আসে কালো পাথরের মূর্তি দেখতে।

দিন বদলের হাওয়ায় এ গ্রামের মানুষের বিশ্বাসেও পরিবর্তন এসেছে। কেউ কেউ তাদের বাড়িতে দরজা লাগাচ্ছেন। তবে এখনো প্রায় সব মানুষই দরজা লাগানোর বিপক্ষে। তবে চাইলেই দরজা লাগানো সম্ভব হয় না, এজন্য নিতে হয় পঞ্চায়েতের অনুমতি।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

]]>
শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ২) https://thenewsbangla.com/interesting-story-of-lord-shiv-and-princess-parvatis-marriage-2/ Mon, 11 Mar 2019 09:14:47 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=8094 শিব পার্বতী বিবাহ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। শিব পার্বতীর প্রেম বিবাহ নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। জেনে নিন সেই গল্প। পড়ুন দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

পড়ুন প্রথম পর্বঃ শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ১)

প্রথমেই মেনকা দেখলেন গন্ধর্বরাজ বিশ্ববসুকে। বিশ্ববসু ছিলেন সুদর্শন পুরুষ। মেনকা ভাবলেন, ইনিই শিব। কিন্তু প্রশ্ন করে জানলেন, উনি সামান্য গায়কমাত্র, বিবাহসভায় শিবের চিত্তবিনোদনের জন্য এসেছেন।

তাই শুনে মেনকা ভাবলেন, শিব নিশ্চয় আরও সুদর্শন। তখন তিনি সম্পদের দেবতা কুবেরকে দেখলেন, কুবের বিশ্ববসু অপেক্ষা সুদর্শন। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন যে উনি শিব নন।

তারপর একে একে মেনকা দেখলেন বরুণ, যম, ইন্দ্র, সূর্য, চন্দ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও বৃহস্পতিকে। প্রত্যেকেই পরম সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন, এঁরা কেউই শিব নন, শিবের অনুচরমাত্র।

শুনে মেনকার আনন্দ আর ধরে না। এমন সুদর্শন দেবতারা যদি শিবের অনুচরমাত্র হন, তবে শিব নিজে কত না সুদর্শন। কিন্তু কোথায় শিব? শেষে এলেন শিব। নারদ মেনকাকে বললেন, ‘ইনিই শিব।’ জামাইয়ের অমন ভীষণ মূর্তি দেখে মেনকা তো মূর্ছা গেলেন।

মূর্ছা যাবেনই না বা কেন? ষাঁড়ের পিঠে চড়ে এসেছিলেন শিব। তিনটে চোখ, পাঁচটা মাথা, দশটা হাত, গায়ে মাখা ছাই, কপালে চন্দ্র, পরনে বাঘছাল, গলায় খুলির মালা। সঙ্গী ভূতপ্রেতেদের যেমন চেহারা, তেমনই ভয়ানক তাদের চিৎকার রব।

জ্ঞান ফিরতে মেনকা বিলাপ করতে লাগলেন। এমন লোককে পাত্র নির্বাচনের জন্য তিনি হিমালয়, নারদ ও পার্বতীকে তিরস্কার করতে লাগলেন। ব্রহ্মা, অন্যান্য দেবগণ ও ঋষিরা মেনকাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।

মেনকা বললেন, ‘আমি এমন শিবের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেব না। বরং মেয়েকে বিষ দিয়ে মারব, কুয়োয় ফেলে হত্যা করব, টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবো, সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দেবো। আমি আত্মহত্যা করব। কিন্তু পার্বতীর বিয়ে আমি অন্য কারোর সঙ্গে দেবো’।

মা জেদ ধরলে মেয়ে পার্বতীও বেঁকে বসলেন। বললেন, ‘শিব ছাড়া আমি আর কাউকেই বিয়ে করব না। শৃগাল কি সিংহের বিকল্প হতে পারে?’

বিষ্ণু মেনকাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মেনকা কোনো কথাই শুনলেন না। শেষে নারদ শিবকে মনোহর রূপ ধারণ করার অনুরোধ করলেন। শাশুড়িকে শান্ত করতে শিবকে তাই করতে হল।

শিবের শরীর সহস্রসূর্যের প্রভাময় হল, মস্তকে শোভা পেল দিব্য মুকুট, অঙ্গ আবৃত হল বহুমূল্য বস্ত্রে, কণ্ঠের অলংকাররাজি নক্ষত্রদেরও লজ্জা দিতে লাগল। শিবের সেই মনোহর রূপ দেখে সবাই মোহিত হলেন। এমনকি মেনকাও।

নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য ক্ষমা চাইলেন মেনকা। শিব ও পার্বতীর বিবাহে তাঁর আর কোনো আপত্তি রইল না। ব্রহ্মার পৌরোহিত্যে শিব ও পার্বতীর বিবাহ সম্পন্ন হল। শিব পার্বতীকে নিয়ে কৈলাসে ফিরলেন।

আর এইভাবেই শিব-পার্বতীর বিয়ে স্থান করে নিল আমাদের পূরাণে। আজও সেই গল্প দাদু ঠাকুমার কাছে শোনে বাচ্চারা।

]]>
শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ১) https://thenewsbangla.com/interesting-story-of-lord-shiv-and-princess-parvatis-marriage/ Mon, 11 Mar 2019 06:22:41 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=8062 শিব পার্বতীর প্রেম বিবাহ নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। জেনে নিন সেই গল্প। পড়ুন প্রথম পর্ব। Love at First Sight. পার্বতী শিবের প্রেমে পড়লেন। দিনরাত অন্য চিন্তা নেই, শুধু শিব শিব আর শিব।

একদিন দেবর্ষি নারদ এসে পার্বতীকে বললেন, শিব কেবলমাত্র তপস্যাতেই সন্তুষ্ট হন। তপস্যা বিনা ব্রহ্মা বা অন্যান্য দেবতারাও শিবের দর্শন পান না।

নারদের পরামর্শ মতো পার্বতী তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথমে তিনি পিতামাতার অনুমতি নিলেন। তাঁর পিতা গিরিরাজ হিমালয় সাগ্রহে অনুমতি দিলেন। যদিও মা মেনকা, মেয়ে পার্বতীকে এমন কঠিন তপস্যা করতে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু পরে তিনিও অনুমতি দিলেন।

পার্বতী বহুমূল্য বস্ত্র ও অলংকারাদি পরিত্যাগ করে মৃগচর্ম পরিধান করলেন। তারপর হিমালয়ের গৌরীশিখর নামক চূড়ায় গিয়ে কঠিন তপস্যায় বসলেন। বর্ষাকালে মাটিতে বসে, শীতকালে জলে দাঁড়িয়ে তপস্যা করতে লাগলেন পার্বতী।

বন্য জন্তুরা তাঁর ক্ষতি করা দূরে থাক, কাছে ঘেঁষতেও ভয় পেতে লাগল। সকল দেবতা ও ঋষিরা একত্রিত হয়ে এই অত্যাশ্চর্য তপস্যা চাক্ষুষ করতে লাগলেন।

একসময় দেবতাগণ ও ঋষিগণ শিবের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বললেন, ‘হে প্রভু, আপনি কি দেখতে পান না পার্বতী কি ভীষণ তপস্যায় বসেছেন? এমন কঠোর তপস্যা পূর্বে কেউ করেনি। ভবিষ্যতেও কেউ করতে পারবে না। অনুগ্রহ করে তাঁর মনস্কাম পূর্ণ করুন’।

শিব তখন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশ ধরে পার্বতীর কাছে গেলেন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ দেখে পার্বতী ফলফুল দিয়ে তাঁর পূজা করলেন।

ছদ্মবেশী শিব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তপস্যা করছ কেন? তুমি কি চাও?’ পার্বতী বললেন, ‘আমি শিবকে আমার স্বামীরূপে পেতে চাই’।

ব্রাহ্মণবেশী শিব বললেন, ‘তুমি তো দেখি মহামুর্খ! তুমি সোনার বদলে কাঁচ আর চন্দনের বদলে কাদা চাও! গঙ্গাজল ফেলে কেউ কি কূপের জল পান করে? বিবাহ করতে হলে স্বর্গের দেবতাদের করো। ইন্দ্র তোমার উপযুক্ত স্বামী হতে পারেন।

শিব আবার একটা দেবতা নাকি! তিনটে চোখ, পাঁচটা মাথা, মাথায় জটা, গায়ে ভষ্ম, গলায় সাপের মালা, সঙ্গী ভূতপ্রেত, পরনে নেই কাপড়, ট্যাঁকে নেই টাকা! থাকার মধ্যে আছে গলায় বিষ! এমনকি কে যে তার বাপ-মা তাও কেউ জানে না! থাকে গভীর বনে! আমার মতে তুমি ভুল করছ। শিবকে ভুলে যাও। নিজের জীবনখানা নষ্ট কোরো না।

ব্রাহ্মণের কথা শুনে পার্বতী রেগে উঠলেন। বললেন, ‘মুর্খ তো আপনি। আপনি শিবের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনিই তো মহাদেব। আপনার মতো শিবনিন্দুকের সেবা করলুম, ধিক আমাকে। শিবের বিরুদ্ধে আর একটি শব্দ উচ্চারণের আগেই আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। শিবনিন্দার একটি শব্দও শুনতে চাই নে’।

পার্বতী সেই স্থান পরিত্যাগ করতে যাবেন, এমন সময় শিব স্বমূর্তি ধরে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছো? আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমারই জন্য প্রার্থনা করছিলে। এখন আমাকে ছেড়ে গেলে তো চলবে না। আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে দেবো না। তুমি বর চাও।’

অভিভূত পার্বতী বললেন, ‘প্রভু, আমাকে বিবাহ করুন’। শিব বললেন, ‘তথাস্তু’। এই কথা শুনে পার্বতী ফিরে এলেন ঘরে।

শিব সপ্তর্ষিকে ডেকে তাঁদের দূত নিয়োগ করলেন। তাঁরা গিরিরাজ হিমালয়ের কাছে বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। শুনে গিরিরাজের আনন্দের সীমা রইল না। শুভদিন স্থির করে বিবাহের কথা পাকা হয়ে গেল।

বিবাহের দিন গন্ধর্বেরা গান ধরলেন, অপ্সরাগণ নৃত্য শুরু করলেন। বরযাত্রী হবার জন্য দেবতারা উপস্থিত হলেন কৈলাসশিখরে। এদিকে গিরিরাজও প্রস্তুত।

তাঁর প্রাসাদ তোরণ, পতাকা ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। শিব হিমালয়ের প্রাসাদে এসে পৌঁছাতেই মেনকা বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘কই, শিব কই? দেখি আমার জামাই কেমন। যাকে পেতে মেয়েটা আমার এমন কঠোর তপস্যা করলে। সে নিশ্চয় পরম সুন্দর।’

শিবকে দেখেই অজ্ঞান শ্বাশুড়ি মেনকা। কেন? দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব পড়তে চোখ রাখুন The News বাংলা ফেসবুক পেজ।

]]>
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য https://thenewsbangla.com/goddess-lakshmi-the-secret-of-successful-worshiping-goddess-lakshmi/ Wed, 06 Feb 2019 19:43:22 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=6536 বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবার হল সাপ্তাহিক লক্ষ্মী আরাধনার দিন। বাংলায় বৃহস্পতিবারকে বলা হয় লক্ষ্মীবার। এই দিন লক্ষ্মীপূজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। কিন্তু আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে শুদ্ধ আচারে অথচ সহজে লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?

আরও পড়ুনঃ কেন মা কালীর পায়ের নিচে বাবা মহাদেব

ফর্দঃ বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপূজার উপকরণ অতীব সামান্য। যেগুলি লাগে সেগুলি হল— সিঁদুর, ঘট ১টি, ধান সামান্য, মাটি সামান্য, আমপল্লব ১টি, ফুল ১টি, দুর্বা সামান্য, তুলসীপাতা ২টি, ফুল, কাঁঠালি কলা বা হরীতকী ১টি, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সামান্য আতপচাল ও জল। কোনো দ্রব্য সংগ্রহ করতে না পারলে, পূজার শেষে সেই দ্রব্যটির কথা মা লক্ষ্মীর কাছে উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে।

বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা

লক্ষ্মী পরিচয়ঃ যে দেবতার পূজা করেন, সেই দেবতার পরিচয় আগে জেনে নিতে হয়। লক্ষ্মীকে আমরা টাকাপয়সার দেবী ভাবি, আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ওইটুকুতেই নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দেন না, তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন। এককথায় লক্ষ্মীপূজা করলে, মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়।

স্বামী প্রমেয়ানন্দ বলেছেন, ‘কেবল টাকাকড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া। যাঁরা সাধক তাঁরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তিধন লাভের জন্য’। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, এটি বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের পরিবর্তিত রূপ। মা লক্ষ্মী আসলে তাঁর স্বামীর বাহনটিই ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সিদ্ধপুরুষ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এর অজানা কাহিনী

লক্ষ্মী বাহনঃ কিন্তু এই রূপ পেঁচার কেন? লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। তাছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়।

বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা

জ্ঞাতব্য নিয়মকানুনঃ লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে, যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে। তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।

আরও পড়ুনঃ নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো

লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়। লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।

লক্ষ্মীপূজা প্রতিমা, সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে হয়ে থাকে। পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় লক্ষ্মীপূজা করেন, পশ্চিমবঙ্গীয়রা লক্ষ্মীর ধানপাত্রে বা ঘটে পূজা করেন। কারো কারো বিশেষ পারিবারিক লক্ষ্মীপ্রতীক রয়েছে। যাঁর যা আছে, বা যাঁদের যা নিয়ম তাঁরা তাতেই লক্ষ্মীপূজা করবেন। পূজার পূর্বে পূজাস্থান পরিষ্কার করে নিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন। পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন।

আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা

পূজার সময় অন্যমনস্ক হবেন না বা অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন। পূজার সময় অন্য কথা বললে বা অন্যমনস্ক হলে মন্ত্রপাঠাদি করে লক্ষ্মীপূজা করাই শ্রেয়। কিন্তু একমনে আন্তরিকভাবে লক্ষ্মীপূজা করলে বিনা মন্ত্রেই পূজা সিদ্ধ হয়। অবশ্য দীক্ষিত হলে গুরুমন্ত্রেও পূজা চলে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, মন্ত্রপাঠ ও পূজাক্রিয়াদিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পূজা করবেন না। বিনা মন্ত্রে পূজা শুধু সেই সবে অনভিজ্ঞদের জন্য।

পূজাপ্রণালীঃ প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোন পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম। তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন।

বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, সফলভাবে লক্ষ্মী পূজা করার রহস্য/The News বাংলা

সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন। এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল-নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়।

এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন। লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল—

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

মন্ত্রটি পাঠ করতে ভাল। নয়তো লক্ষ্মীর রূপটি চোখ বুজে মনে মনে খানিকক্ষণ চিন্তা করবেন। এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন। আবাহন মন্ত্রটি হল—ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।

সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন, এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি স্থির হয়ে থাকো মা। তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল-নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।

আরও পড়ুনঃ মায়ের পুজোয় মদ বিক্রিতে রেকর্ড গড়ল মমতার বাংলা

এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে লক্ষ্মীকে দেবেন। লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল। এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন। এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন।

লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন। এরপর লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন। তারপর ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। মন্ত্র—এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ। (শ্রীঁ উচ্চারণ হবে শ্রীং, নমঃ উচ্চারণ হবে নমহ।)

পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন। তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর প্যাঁচাকেও একটি ফুল দেবেন। আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র যথাশক্তি জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন। শেষে নিম্নোক্ত মন্ত্রে প্রণাম করবেন।

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।

মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন। এরপর ব্রতকথা পাঠ করবেন বা শুনবেন। কেউ কেউ লক্ষ্মীকে পান-সুপারিও দেন। আপনাদের বাড়িতে তেমন প্রথা থাকলে দেবেন। বাড়িতে যে লক্ষ্মীর পাঁচালি আছে সেটিই পড়বেন। লক্ষ্মীর ব্রতকথা বা পাঁচালি বাজারে সুলভ। বাড়িতে পাঁচালি না থাকলে, যেকোনো একটি কিনে নিয়ে পাঠ করলেই চলে। ভক্তি ভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করুন, সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুন আপনি ও আপনার পরিবার।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

]]>
কেন মা কালীর পায়ের নিচে বাবা মহাদেব https://thenewsbangla.com/why-is-god-mahadev-under-the-feet-of-goddess-kali/ Thu, 08 Nov 2018 11:55:22 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=2045 The News বাংলা: মা কালী হলেন একজন হিন্দু দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় কালীপূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত দশজন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম। কিন্তু মা কালীর পায়ের নীচে শিব কেন ?

শাক্ত মতে, কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। এগুলি হল: দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী, মহাকালী, রক্ষাকালী ইত্যাদি।

কিন্তু, মা কালীর পদতলে শিব কেন?

Image Source: Google

পুরাণে আছে, অসুর কূলের আক্রমনের ফলে সঙ্কটে পরে দেবতারা। তাঁদের তাঁড়িয়ে স্বর্গরাজ্যের অধিকার নেওয়ার চেষ্টা করেছিল অসুররা। অসুরদের প্রধান ছিলেন রক্তবীজ। ব্রহ্মার বরে রক্তবীজের একফোঁটা রক্ত থেকে জন্ম নিচ্ছিল আরো হাজার রক্তবীজ।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সিদ্ধপুরুষ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এর অজানা কাহিনী

একফোঁটা রক্ত ভূমিতে পড়লেই আর্বিভূত হচ্ছিল অসুর বাহিনী। অসুর নিধন করতে অবর্তীণ হোন দেবী দূর্গা। সব অসুর নিহত হলেও বেঁচে থাকেন রক্তবীজ। কিন্তু সেই যুদ্ধেও ব্রহ্মার বরে অপরাজেয় থাকেন রক্তবীজ। এই অবস্থায় দূর্গার ভীষণ ক্রোধে তাঁর দুই ভ্রু এর মাঝখান থেকে জন্ম নেন দেবী কালী।

Image Source: Google

কালীর ভয়াল দৃষ্টিতেই নিহত হয় বহু অসুর। এরপর দেবীর চিৎকারে প্রাণহানি হয় আরও অনেক অসুরের। রক্তবরণ লকলকে জিব বের করে কালী গ্রাস করে নেন হাতিও ঘোড়া সওয়ার অসুর বাহিনীকে। তারপরেও টিকে থাকেন রক্তবীজ। এই অবস্থায় দেবী কালী তাঁকে অস্ত্রে বিদ্ধ করে তাঁর রক্ত পান করতে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো

রক্তবীজের একফোঁটা রক্তও যাতে ভূমিতে না পড়ে সেই কারনে রক্তবীজের দেহ শূণ্যে তুলে নেন দেবী কালী। এই অবস্থায় রক্তবীজের দেহের সবটুকু রক্তপান করেন দেবী কালী। শেষ বিন্দু রক্ত পান করার পর নিথর রক্তশূণ্য রক্তবীজের দেহ ছুড়ে ফেলে দেন মাতা কালী।

Image Source: Google

আকণ্ঠ রক্ত পান করে বিজয়নৃত্য শুরু করেন মাতা কালী। নিহত অসুরের হাত দিয়ে তিনি কোমড়বন্ধনী এবং মাথা দিয়ে মালিকা বানিয়ে পরিধান করেন। কালীর উন্মাদিনী নাচ দেখে প্রমোদ গোনেন দেবতারা। কারণ এই নাচে আসন্ন হচ্ছিল সৃষ্টির লয়।

পৃথিবীকে ধ্বংশের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য দেবতারা শিবের শরণাগত হলেন। শিবের একাধিক মৌখিক অনুরোধ শুনতে পাননি মাতা কালী। কারন তখন তিনি উন্মাদিনী মত নেচে চলেছেন। আর কোনও উপায় না দেখে নৃত্যরতা কালীর পায়ের তলায় নিজেকে ছুঁড়ে দিলেন মহাদেব।

Image Source: Google

এরপরই চৈতন্য হয় মা কালীর। থেমে যায় নাচ। পায়ের নিচে স্বামীকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটেন দেবী কালী। এই পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বন করেই যুগ যুগ ধরেই পূজিত হয়ে আসছে মায়ের এই প্রতিমা। দূর্গার পাশে শিবকে নানা ভাবে দেথা যায়।

আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা

তার মধ্যে হরগৌরী রূপ বিখ্যাত। মাতা কালীর সঙ্গে শিব থাকলে তাঁর জায়গা সবসময় দেবীর পদযুগলের নিচে। এই বিগ্রহে কালীর ডান পা যদি এগিয়ে থাকে তবে তিনি দক্ষিণা কালী। আবার বাম পা এগিয়ে থাকলে তা মায়ের বামা ক্ষ্যাপা রূপ।

]]>
অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা https://thenewsbangla.com/unknown-story-of-tarapith-ma-tara-worshiped-in-kali-puja/ Mon, 05 Nov 2018 10:55:46 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=1936 The News বাংলা: সব দেবীর উর্দ্ধে মা তারা বা তারা মা। তাই তারাপীঠে অন্য কোনও দেবীমূর্তি পুজোর চল নেই। মা তারাকে সামনে রেখেই সমস্ত দেবীমূর্তির পুজো করা হয় সিদ্ধপিঠ তারাপীঠে।

তারাপীঠের মা তারা। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। কালিপুজোর দিনও তাই মা তারাকেই শ্যামা রূপে পুজো করা হয়। এদিন মায়ের নিত্য পূজার্চনা ছাড়াও শ্যামা রূপে মায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়।

Image Source: Google

তারাপীঠ, বীরভূম জেলায় অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। এই শহর তান্ত্রিক দেবী, তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। হিন্দুদের বিশ্বাসে, এই মন্দির ও শ্মশান একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই স্থানটির নামও এখানকার ঐতিহ্যবাহী মা তারা আরাধনার সঙ্গে যুক্ত।

Image Source: Google

তারাপীঠ এখানকার “পাগলা সন্ন্যাসী” বামাক্ষ্যাপা-র জন্যও প্রসিদ্ধ। বামাক্ষ্যাপা এই মন্দিরে পূজা করতেন এবং মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রে কৈলাসপতি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের কাছে তন্ত্রসাধনা করতেন। বামাক্ষ্যাপা তারা দেবীর পূজাতেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মন্দিরের অদূরেই তাঁর আশ্রম অবস্থিত।

তারাপীঠ ৫১ পীঠের অন্তর্বর্তী নয়। ‘মহাপীঠপুরাণ’-এ উল্লিখিত পীঠস্থান-তলিকায় তারাপীঠের উল্লেখ নেই। জনচিত্তে অবশ্য একথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে যে, সতীর তৃতীয় নয়ন এখানে পড়েছিল। কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে এর কোনও সমর্থন পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুনঃ স্বপ্নের কালিপুজোয় মা কালির সঙ্গে সাধারণ নারীর পুজো

তারাপীঠ আসলে একটি ‘সিদ্ধপীঠ’। সুদূর অতীত থেকে এখানে বহু সাধক এসেছেন তপস্যা করার জন্য। এবং তাঁদের সিদ্ধিলাভেই ধন্য হয়েছে এই পীঠ। সুতরাং এই পীঠের মহিমা অন্য শক্তিপীঠগুলির চাইতে একাবেরেই আলাদা।

Image Source: Google

কালি পুজোর দিন আর পাঁচটা দিনের মতোই মা তারাকে ভোরবেলা স্নান করানো হয়। এর পরেই মা তারাকে অষ্টধাতুর মুখাভরন, মুণ্ডমালা, মুকুট, সোনার অলঙ্কার, শোলা ও ফুল-মালা দিয়ে শ্যামা রূপে সাজানো হয়।

এরপর শুরু হয় মঙ্গলারতি। মায়ের প্রথম পুজোর সঙ্গে দেওয়া হয় শীতলা ভোগ। আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনও মায়ের নিত্যভোগ হয়। সন্ধ্যারতির আগে মা’কে পুনরায় ফুল-মালা দিয়ে সাজানো হয়।

মন্দির কমিটির তরফ থেকে বলা হয়, “শ্যামা পুজোর শুভক্ষণে নাটোরের পুরোহিত এবং মন্দিরের পালাদার সেবাইত পুজোয় বসেন। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ, অন্যদিকে চলে পুজো। পুজো শেষে মায়ের আরতি এবং দ্বিতীয়বার ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ভাজা মিষ্টি, পায়েস দেওয়া হয়”।

Image Source: Google

মন্দির কমিটি আরও বলে, “কালিপুজো উপলক্ষে সেবাইতদের বাড়ির মেয়েরা মন্দিরের চারিদিক মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে তোলেন। সারারাত মোমবাতি আর মাটির প্রদীপে আলোকময় হয়ে থাকে শ্মশান চত্বর’।

আরও পড়ুনঃ ৩০০ বছরের ডাকাতে কালির হাড় হিম করা কাহিনি

রাতভর চলে যজ্ঞ। শ্মশানের বিভিন্ন জায়গায় সাধুসন্তরা ভক্তদের মঙ্গল কামনায় যজ্ঞ করে থাকেন। কেউ কেউ শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।

Image Source: Google

কালিপুজো উপলক্ষে ছাগ বলি দেওয়া হয়। বহু ভক্ত মানত করে বলি দিয়ে থাকেন। মা তারাকে শ্যামা রূপে পুজো দিতে দূরদূরান্তের বহু ভক্ত সকাল থেকে ভিড় জমান। সারাদিনই মাকে শ্যামা রূপে পুজো দেওয়া হয়।

কালিপুজোর দিন সারারাত খুলে রাখা হয় মন্দির। কালিপুজোতে তারা মার পুজো দিয়ে দর্শনার্থীরাও খুব খুশি হন। দর্শনার্থীরা অন্যান্য দিন মা তারা রূপে পুজো দিয়ে থাকেন। কিন্তু কালিপুজোয় মা কালির অন্য রূপে মা তারাকে পুজো দিতেই তারাপীঠে আসেন সবাই।

]]>
নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো https://thenewsbangla.com/goddess-kali-puja-is-done-with-the-mans-skeleton/ Mon, 15 Oct 2018 07:44:27 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=1205 নিজস্ব সংবাদদাতা : তন্ত্রমতে পুজো পান শতাধিক বছরের প্রাচীন শ্মশানকালী। কালীপুজোর বাঁধা গতে মন্ত্র পড়ে পুজো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মহাশ্মশান কালীর পুজো অপরিবর্তিত প্রাচীন তন্ত্রমতেই।

শতাধিক বছরের পুরনো পদ্ধতি মেনে দেবীর পেছনে সাজানো হয় ১০৮টি নরকঙ্কালের খুলি। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুরোহিত তন্ত্রের নিয়ম মেনে দেবীর পুজো করে। অন্য উপকরণের মধ্যে অবশ্যই থাকবে সুরার বোতল, রান্না করা মাংস, কাঁচা ছোলা। আগে অবশ্য চোলাই ছিল পুজোর উপকরণ। কিন্তু এখন বিলিতি মদেই চলে দেবীর আরাধনা।

এই জেলার অন্যতম প্রাচীন শ্মশান এটি। কথিত আছে, ভগীরথ নাকি দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের পাশ দিয়ে গঙ্গাকে সাগরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই আদি গঙ্গার পাড়ে এক সময়ে ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা জনবসতিহীন এলাকা। সেখানে কিছুটা জায়গা নিয়ে বহু বছর আগে জঙ্গল কেটে শবদাহের কাজ শুরু হয়।

সে সময়ে শ্মশান গড়ার পাশাপাশি তৈরি হয়েছিল টিনের দরমা ঘেরা টিনের চালের শ্মশানকালীর মন্দির। তারপর গঙ্গা উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দরমা ঘেরা মন্দির সংস্কার করে বড় পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন পুজোর পদ্ধতিতে এখনও কোনও বদল হয়নি।

একাত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ, এক মনে দেবীর চোখে তুলি প্রতিবার চোখের তুলি টানেন। পটুয়াপাড়ার কোনও পেশাদার শিল্পী তিনি নন। শ্মশানকালী মন্দিরের পুরোহিত ওই বৃদ্ধই দেবীকে স্পর্শ করার একমাত্র অধিকারী। শুধু তাই নয়, তন্ত্রকর্মের পঞ্চমুণ্ডের আসনটিতেও অন্য কেউ বসতে পারবে না। এই গুরুভার বংশ পরম্পরায় ঐ পুরোহিত শ্যামল চক্রবর্তীর হাতে।

মা কালীর নরমুণ্ডমালায় রয়েছে একটি মহিষের মুণ্ডও। প্রায় ১০ ফুট লম্বা দেবীর এক পাশে বামাক্ষ্যাপা, অন্য পাশে তৈলন্দ্যস্বামীর বাঁধানো ছবি। প্রতিমার পেছনে দেওয়ালের খোপে খোপে রাখা ১০৮টি নরমুণ্ডও পুজোর আগে ঝাড়পোঁছ করে রাখতে হয় ।

পুজোর দিনে প্রাচীন রীতি মেনে সব ক’টি নরমুণ্ডর আত্মার শান্তি কামনা ও সাধনার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে মদ, ছোলা, মাংস দিয়ে মন্ত্রপাঠ চলে। প্রথম দিন থেকেই এই ব্যবস্থা। তবে কী ভাবে অতগুলি খুলি জোগাড় হয়েছিল, কেউ জানে না।

এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্যমলবাবুর বাবা ফণিভূষণ চক্রবর্তী। তখন শ্যমলবাবুর বারো বছর বয়স। ওনার বাবা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে যান। সেই থেকে শ্যমলবাবুর মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানে মা করুণাময়ী কালী রূপে প্রতিষ্ঠিত।

এই প্রাচীন পুজো চাঁদা তুলে হয় না। সারা বছর ধরে মন্দিরে দর্শনার্থীরা এসে দেবীদর্শন করার পরে সামনে রাখা পিতলের থালাতে সামর্থ্য মতো দিয়ে যান। সারা বছরের ওই দানের পয়সাতেই শ্মশানকালীর আরাধনা হয়। পুজোর দিনে সারা রাত ভক্তদের ভিড় জমবে। তাঁদের রাতে খাওয়ার জন্য ভোগের ব্যবস্থা থাকে। কেউ কেউ সারা রাত কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফেরেন।

এই শ্মশানকালীর মন্দিরটি বহু বছরের প্রাচীন। এলাকায় জাগ্রত বলে খ্যাত এই দেবীর পুজোর দিনে, পরিবারের কল্যাণ কামনায় অনেকে হাজির হন। এবারের কালী পুজোয় আপনিও চলে আসতে পারেন মহাশ্মশান কালীর পুজো দেখতে।

]]>